হাটে গরু বেশি ক্রেতা কম বাইরের ব্যাপারীও কম
হাটে গরু বেশি ক্রেতা কম বাইরের ব্যাপারীও কম

সংযোগ ডেস্ক: দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদ-উল আজহা। ঈদের বাকী আর মাত্র দু-তিন দিন। কিন্তু পশুর হাটে ক্রেতা নেই। আগের বছর গুলোতে এসময় গাইবান্ধার পশুরহাটগুলোতে যে চিত্র ছিলো তার সাথে এবার মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। কৃষক ও খামারীরা হাটগুলোতে অনেক পশু নিয়ে আসলেও ক্রেতা নেই বললেই চলে। ক্রেতার অভাবে হাটগুলো এখনো জমে ওঠেনি। এর আগের কোরবানীর ঈদে দেখা যেত- ঢাকা সহ দেশের বিভাগীয় শহর থেকে ক্রেতা ও ব্যাপারীরা গাইবান্ধার বিভিন্ন হাট থেকে গরু সংগ্রহ করে ট্রাক ভরে নিয়ে যেতেন। এবার সেই দৃশ্য দেখা যাচ্ছেনা। এতে গরু বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন কৃষক ও খামারীরা।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, দেশি গরুর সরবরাহ থাকলেও আশানুরূপ দাম পাচ্ছেন না বিক্রেতারা। অন্যদিকে মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি, বড় গরুর চাহিদা কম। অন্যান্য বছর জেলায় গরু কিনতে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতা ও ব্যাপারীরা এলেও এবার তা চোখে পড়ছেনা। স্থানীয় ব্যাপারীদেরও এবার ঢাকায় গরু সরবরাহ করতে আগ্রহ কম। একদিকে গোখাদ্যর দাম বেশি, অন্যদিকে বাজারে গরুর চাহিদা কম। সব মিলিয়ে উত্তরের জেলা গাইবান্ধার খামারিরা বেশ বিপাকে পড়েছেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গাইবান্ধায় কোরবানির জন্য প্রায় দেড় লাখ গরু প্রস্তুত করেছেন প্রান্তিক কৃষক ও খামারীরা। ১৭ হাজার ৩৬৮টি খামার এবং কৃষকের কাছে কোরবানির জন্য ১লাখ ৯৬ হাজার ২৭৭ গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে। আর এ জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা ১ লাখ ২৬ হাজার ৩৫৮টি। জেলার চাহিদা মিটিয়ে অবশিষ্ট থাকবে ৬৯ হাজার ৯৭২টি পশু। পশু কেনা-বেচার জন্য জেলার সাত উপজেলায় কোরবানির স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে হাট বসছে ৪১টি।
জেলার সদর উপজেলার দারিয়াপুর, সাঘাটা উপজেলার হাট ভরতখালী, গোবিন্দগঞ্জ পৌর হাট ও পলাশবাড়ী উপজেলার মাঠের হাটসহ বেশ কয়েকটি কোরবানির পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, ঈদ উল আজহা উপলক্ষে বিভিন্ন রং ও আকারের গরু উঠছে হাটে। আকার ভেদে ৫০ হাজার থেকে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম হাঁকা হচ্ছে। হাটে গরু দিয়ে ভরপুর কিন্তু ক্রেতা কম। এতে বিক্রেতারা হতাশায় রয়েছেন। অন্যদিকে হাট ইজরাদারদের খাজনা বেশি নেওয়ার অভিযোগও আছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের।
সদর উপজেলার দারিয়াপুর হাটে গরু নিয়ে আসা দুর্গাপুর গ্রামের কৃষক মনিরুজ্জামান জানায়, এ বছর কোরবানির জন্য তিনটি গরু লালন-পালন করেছেন তিনি। শনিবার ও বৃহস্পতিবার গরু নিয়ে দুটি হাটে যান। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী মূল্য না পাওয়ায় গরু বিক্রি না করে বাড়িতে ফেরত নিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, প্রতিটি গরুর দাম ওঠে ৭৫ হাজার টাকা। এই দামে বিক্রি করলে তার কোনো লাভ থাকবে না। গো-খাদ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে, তাতে গরু পালতেও খরচ অনেক বেশি হয়েছে। এ বছর সীমান্তে কড়াকড়ি থাকায় ভারতীয় গরু আসেনি। ফলে হাটগুলোতে দেশি গরুর প্রচুর সরবরাহ দেখা যাচ্ছে। তারপরও খামারিরা আশানুরূপ দাম না পাওয়ার অভিযোগ করছেন।
জেলার সাঘাটার উপজেলার ভরতখালীর পশুরহাটের ইজারাদার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, এ হাটে সব চেয়ে বেশি চরাঞ্চলের গরু বেচাকেনা হয়। ক্রেতার সংখ্যার তুলনায় চার-পাঁচ গুণ বেশি গরুর সরবরাহ আছে। অন্যান্য বছর ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা গরু কেনার জন্য আসতেন। এবার বাইরের পাইকাররাও তেমন আসছেন না। ফলে কৃষকসহ খামারিরা অনেকটা বাধ্য হয়েই কম দামে গরু বিক্রি করছেন। তবে অনেকেই কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় বিক্রিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
এব্যাপারে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিক্রেতাদের সহায়তা করতে অনলাইনে পশু বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে আগ্রহী বিক্রেতারা যোগাযোগ করছেন।