‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতিশ্রুতি বালাসী-বাহাদুরাবাদ ঘাটে ব্যারেজের দাবী তুলবো’

বিএনপি

‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতিশ্রুতি বালাসী-বাহাদুরাবাদ ঘাটে ব্যারেজের দাবী তুলবো’

মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান খান বাবু। গাইবান্ধার রাজনৈতিক অঙ্গনের অতি পরিচিত মুখ। রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম ও বেড়ে ওঠা। উত্তর জনপদের শহর গাইবান্ধা শহরকে ঘিরে যার শৈশব, কৈশোর। রাজনৈতিক অঙ্গনে যাত্রাটাও তার এই শহরে। ছাত্র জীবনে তিনি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের গাইবান্ধা মহকুমার যুগ্ম আহবায়ক ও প্রতিষ্ঠাতা নির্বাচিত সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। জাতীয়তাবাদী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থা- জাসাসের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম আহবায়ক, জেলা যুবদলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া শহর বিএনপিতেও বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।

পরবর্তীতে আনিসুজ্জামান খান বাবু গাইবান্ধা জেলা বিএনপির দুই বার সাধারণ সম্পাদক, একবার সদস্য সচিব, দুইবার আহবায়ক, একবার সভাপতি এবং জেলা রিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নে পর পর তিন বার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির গ্রাম সরকার বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। আসছে নির্বাচনে তার অংশগ্রহণ ও নির্বাচনী ভাবনা নিয়ে আনিসুজ্জামান খান বাবুর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন হেদায়েতুল ইসলাম বাবু।

প্রশ্ন- আপনি কেন প্রত্যাশা করছেন দল এবার আপনাকে গাইবান্ধা সদর-২ আসন থেকে মনোনীত করবে?

আনিসুজ্জামান খান বাবু: যারা  শ্রম, মেধা ও সময় বিনিয়োগ করে দল ও মানুষের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেয় দল তাকেই মনোনীত করে। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে দেখবেন, আমি ছাত্রদল, যুবদল, জাসাসের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছি এবং বিএনপির জন্য নিবেদীত প্রাণ কর্মী হিসেবে আজো দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এসব বিষয় বিবেচনা করে দলের নীতিনির্ধারকগণ আমাকে মনোনীত করবেন এমন প্রত্যাশাতো করতেই পারি। 

প্রশ্ন- রাজপথে রাজনৈতিক লড়াই সংগ্রামে আপনার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গুলো তুলে ধরবেন?

আনিসুজ্জামান খান বাবু: আপনি নিশ্চয়ই জানেন, বিগত পতিত সরকারের আমলে আমার রাজনৈতিক সতীর্থদের সাথে অনেক মামলায় আমিও আসামী ছিলাম। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য গাইবান্ধার তুলসীঘাটে বাসে পেট্রোলবোমা হামলায় ৮ জন হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের দু’টি মামলাতেই আমাকে ষড়যন্ত্রমুলকভাবে হুকুমের আসামী করা হয়। এছাড়া অনেকবার রাজপথে পুলিশের হামলা, মামলা, নির্যাতনের শিকার হয়েছি। দমন-পীড়নের শিকার হয়েছি, অনেকবার কারাবরণ করেছি। তারপরও রাজপথ ছাড়িনি। আপোষ করিনি। 

প্রশ্ন- আপনি নিশ্চয়ই আশাবাদী আগামী নির্বাচনে দল আপনাকে মনোনীত করবে।

আনিসুজ্জামান খান বাবু: দীর্ঘ ৪৫ বছরের রাজনৈতিক জীবন পর্যোলোচনা করলে হয়তো দলের নীতিনির্ধারনী মহল আমাকে বিবেচনা করবেন। এটাতো আমি প্রত্যাশা করতেই পারি। এর আগে ২০০১ সালেও আমাকে দল গাইবান্ধা-সদর ২ আসনে মনোনীত করেছিলো। দল থেকে সেবার অনেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলো। তারমধ্যে আমাকেই দল বিবেচনা করে। সে নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে ৩০ হাজার ভোটও পেয়েছিলাম।  

প্রশ্ন- আপনার নির্বাচনী আসন গাইবান্ধা সদর উপজেলা উন্নয়নের দিক থেকে এখনো অনেক পিছিয়ে। দল আপনাকে মনোনীত করলে গাইবান্ধার উন্নয়নে ভোটারদের জন্য কি ধরনের কাজের পরিকল্পনা আপনার। কেন আপনাকে ভোট দেবে সাধারণ মানুষ?

আনিসুজ্জামান খান বাবু: যারা রাজনীতি করেন। রাজনীতিবীদ। তারা নিজেরাই মূল্যায়নের প্রত্যাশা করেন। আমি মনে করি, রাজনীতিবীদের মূল্যায়নের আগে এলাকার সমস্ত শ্রেনীর মানুষের জন্য কাজ করার জন্য, তাদের আপদে বিপদে পাশে দাড়ানোর জন্যইতো রাজনীতিবীদের জন্ম। সেজন্য রাজনীতিবীদের মূল্যায়নের আগে সাধারন মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের অর্পিত দায়িত্ব পালন করাটাই হবে আমার প্রথম ও প্রধান কাজ। ব্যাক্তিগত স্বার্থের উর্ধ্বে থেকে আমি সমষ্টিগত স্বার্থকেই প্রাধান্য দেব। এক কথায় মানুষের কথা চিন্তা না করে কেউ যদি নিজে ভোগ করতে চায়, তাহলে সে রাজনীতিবীদ হতে পারেনা।

আরেকটি বিষয় হলো, অনেকে এখানে দাবী করেন, কৃষি প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট এটিআইকে বিশ্ববিদ্যালয় করতে হবে। এখানে দাবীটা বরাবরই আমাদের ভূল হয়। আমি মনে করি সবার আগে একটি কলেজ দরকার, সেই কাজটা আমি করবো তারপর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।

আপনারা জানেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান একটা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন- বালাসীঘাট থেকে বাহাদুরাবাদ ঘাট পর্যন্ত একটা ব্যারেজ করার। মহান সৃষ্টিকর্তা, দল ও ভোটারেরা চাইলে আমি সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেব। দলের নীতি নির্ধারনী মহলের সাথে আলোচনা করে এই ব্যারেজ বাস্তবায়ন করবো। ব্যারেজ হলে অনেক সুযোগ তৈরি হবে, সার কারখানা হবে, যোগাযোগ সুবিধা বাড়বে, বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে, কৃষকরা উপকৃত হবে, ব্যবসা বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে। 

প্রশ্ন- এই অঞ্চল থেকে অনেক মানুষ রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভাগীয় শহরে যায় কর্মের প্রয়োজনে। কারন এখানে ধানের চারা রোপন আর ধান কাটা ছাড়া কোন কাজ নেই। বছরের বেশীরভাগ সময় তাদের বেকার থাকতে হয়। সেজন্য গাইবান্ধায় কৃষি ভিত্তিক কল কারখানা গড়ে তোলার বিষয়ে আপনি ভাববেন কি না?

আনিসুজ্জামান খান বাবু: এখানে আমাদের একটা জুট মিলের খুব দরকার। এ অঞ্চলে ভালো পাট হয়। এখানে একটা জুট মিল হলে পাটের উপযুক্ত মুল্য নিশ্চিত করা যাবে। আপনি জানেন, গোবিন্দগঞ্জে ব্যাক্তিগত পর্যায়ে হোসিয়ারী শিল্প গড়ে উঠেছে। এই শিল্পটা আমাদের এই দিকে আরো ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ নেব। পাশাপাশি এখানে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করতে পারলে কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য আর অপচয় হবেনা।

প্রশ্ন- এই অঞ্চলে প্রচুর সবজি উৎপাদন হয়। সবজির মৌসুমে কৃষক ন্যায্য দাম পায়না। এই সবজিগুলো সংরক্ষনের ব্যবস্থা থাকলে তারা অনেক বেশী উপকৃত হবে। সবজি সংরক্ষনে কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ নিয়ে ভাববেন কি না?

আনিসুজ্জামান খান বাবু: সদর কেন্দ্রিক কোল্ড স্টোরেজ করলে আসলে উপকার পাওয়া যাবেনা। সদর উপজেলা, সাদুল্লাপুর ও পলাশবাড়ী এই তিন উপজেলার মাঝামাঝি জায়গায় কোল্ড স্টোরেজ করতে পারলে ভালো হয়।

প্রশ্ন- আপনি জানেন ভোটারদের মধ্যে একটা উল্লেখযোগ্য অংশ জুড়ে তরুণরা। এই তরুণদের জন্য অনলাইন নির্ভর আয়ের মাধ্যমে তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব কি না?

আনিসুজ্জামান খান বাবু: ব্যাক্তিগত পর্যায়ে উদ্যোগী হয়ে তরুণদের অনেকে এ পথে অগ্রসর হয়েছে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক কোন উদ্যোগ নেই। আমি চেষ্টা করবো তাদের প্রশিক্ষনের জন্য যাতে একটা ইন্সটিটিউট গড়ে তোলা যায়। এই তরুণরা যাতে দক্ষ মানব সম্পদে রুপান্তরিত হয়, সেই চেষ্টা আমার থাকবে।

প্রশ্ন- ভোটারদের মধ্যে নারীদের সংখ্যাই বেশী। তাদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করে তাদের আত্ননির্ভর করতে কর্মসংস্থানের ব্যাপারে আপনার ভাবনা কি?

আনিসুজ্জামান খান বাবু: নির্বাচিত হলে আমি আমার ক্ষমতার মধ্যে থেকে সব ধরনের উদ্যোগতো নেবই। একই সাথে নারীদের জন্য আমাদের সুদৃষ্টি অবশ্যই রাখতে হবে। তাদের কর্মসংস্থানের জন্য অবশ্যই কাজ করব। 

প্রশ্ন- আপনি নির্বাচিত হলে অন্য অনেকের মতো আবার এসব প্রতিশ্রুতি ভুলে যাবেন না তো? আপনার কর্মকৌশল কেমন হবে? জনগনের কল্যানে নিজেকে কতটুকু নিবেদিত করবেন?

আনিসুজ্জামান খান বাবু: অবশ্যই না। প্রতিটি ইউনিয়নে গিয়ে আমি প্রথমে ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, জনপ্রতিনিধিসহ গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের সাথে পরামর্শ করে ইশতেহার তৈরি করবো। নির্বাচিত হলে পাঁচ বছরের মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জনকল্যানকর কাজ গুলো অবশ্যই করবো। আমি যা ওয়াদা করি, জনপ্রতিনিধি না হয়েও সেই কাজ গুলো করেছি। আমার ভাই পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি তার ওয়াদা পালন করায় তাকে গাইবান্ধার মানুষ মনে রেখেছেন। আমার শরীরে যে রক্ত, আমার ভাইয়ের শরীরেও একই রক্ত প্রবাহিত। আমরা আমাদের নিজেদের জন্য কিছুই করিনি। পৈত্রিক বাড়িতেই আজো থাকি। যে বাড়িটি পাক বাহিনী পুড়ে দিয়েছিলো। নতুন করে নব্বই বছরের পুরোনো বাড়িতে একটি ইটও গাঁথিনি। আমরা মানুষের ক্ষতি করে সম্পদ অর্জন করিনি। ভবিষ্যতেও করবোনা। 

প্রশ্ন- রাজনীতিবীদরা ক্ষমতায় আসলে বদলে যায়। আপনি নির্বাচনের আগে ও পরে জনগনের কাছে নিজের সম্পদের হিসাব প্রকাশ করতে চান কি না?

আনিসুজ্জামান খান বাবু: নিয়ম অনুযায়ী প্রার্থীদেরতো সম্পদের হিসাব দিতেই হবে। আমি দৃঢ় কন্ঠে বলতে পারি নির্বাচিত হলে আমার আচরন, ব্যবহারের যেমন পরিবর্তন হবেনা, তেমনি সম্পদও বৃদ্ধি পাবেনা। অর্থবিত্তের প্রতি কখনো লোভ লালসা ছিলনা, ভবিষ্যতেও থাকবেনা। মানুষের মন জয় করে মানুষের হৃদয়ে স্থান করাই আমার উদ্দেশ্য।

প্রশ্ন- ভোটারদের উদ্দেশ্যে আপনি কিছু বলবেন কিনা?

আনিসুজ্জামান খান বাবু: ভোটাররা আমাকে নির্বাচিত করলে আমি সংসদে গিয়ে আমি ভোটারদের কথাগুলোই সংসদে উত্থাপন করবো, তাদের সমস্ত দাবী দাওয়া পুরণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।

ধন্যবাদ আপনাকে। 

আনিসুজ্জামান খান বাবু: আপনাকেও ধন্যবাদ।