ফুলছড়ির কালিরবাজারে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপনের দাবী

ফুলছড়ির কালিরবাজারে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপনের দাবী

শাহ আলম জাদু: গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলায় প্রস্তাবিত সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল কলেজের স্থান নির্বাচন নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। উপজেলা সদরের জনবহুল এলাকা বাদ দিয়ে নদীর তীরবর্তী কাতলামারী গ্রামে কলেজটি স্থাপনের প্রস্তাব ওঠায় এই বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, জমি অধিগ্রহণের সুযোগ নিয়ে প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা গোপনে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

কালিরবাজার উপজেলা হেডকোয়ার্টারে প্রস্তাবিত সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল কলেজ স্থাপনের দাবীতে রবিবার মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেন স্থানীয়রা। কর্মসূচীতে বক্তারা বলেন, সরকার সারাদেশে ৩২৯টি টেকনিক্যাল স্কুল কলেজ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। ফুলছড়িতেও এই প্রকল্পের আওতায় একটি কলেজ স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। তাদের অভিযোগ, স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের মতামত উপেক্ষা করে উপজেলা প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী কাতলামারী গ্রামকে বেছে নিয়েছেন। এটি উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনো সহজ নয়। স্থানীয়রা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এমন দুর্গম এলাকায় কলেজটি প্রতিষ্ঠা করা হলে সরকারের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে।

তাদের মতে, কলেজটি উপজেলা সদর বা কোনো জনবহুল এলাকায় স্থাপিত হলে সব ইউনিয়নের শিক্ষার্থীরা সহজে যাতায়াত করতে পারবে। এতে শিক্ষার্থী বাড়বে এবং পর্যাপ্ত আবাসনের কারণে দূর-দূরান্তের শিক্ষার্থীরাও উপকৃত হবে। অন্যদিকে, প্রস্তাবিত কাতলামারী গ্রামে কলেজটি স্থাপন করা হলে দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে শিক্ষার্থী সংকট দেখা দিতে পারে। একই কারণে শিক্ষক-কর্মচারীরাও সেখানে থাকতে অনাগ্রহী হতে পারেন।

মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন, উপজেলা বিএনপি'র সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবাল হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক এসএম ইব্রাহিম আলী, আলহাজ্ব মাহবুবুর রহমান,  জামায়াত নেতা মাওলানা আবুল খায়ের, ঠিকাদার রাশেদ খান মিলন ও আব্দুল কাদের ভূঁইয়া, ‎উদাখালী ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান আলহাজ্ব কাবিল উদ্দিন, এরেন্ডাবাড়ি ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান, ছাত্র প্রতিনিধি জাহিদ হাসান জীবন, জেলা এনসিপি নেতা মাসুদুর রহমান আরিফ, এডভোকেট আশিকুর রহমান মুন, উপজেলা বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাত্তার মিয়া, বাসদ নেতা রিবতী বর্মন, ছাত্র খোরশেদ আলম, সাংবাদিক শাকিল আহমেদ, পারভেজ হাসান রুবেল, মোনায়েম হোসেন মীম, তৈয়ব আলী,  উদাখালী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রায়হান ইসলাম রাহুল প্রমুখ।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা নেতা জাহিদ হাসান জীবন বলেন, ‘সরকারের এই ভালো উদ্যোগ তখনই সফল হবে যখন এটি ফুলছড়ি সদর এলাকায় স্থাপিত হবে। চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সন্তানরা এখানে সহজেই পড়তে পারবে। প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা গোপনে কলেজটি কাতলামারী এলাকায় প্রতিষ্ঠার পায়তারা করছেন। এর পিছনে অসৎ উদ্দেশ্য থাকতে পারে।

অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘শুধু জমি পাওয়ার অজুহাতে কলেজটি নদীভাঙন কবলিত এলাকায় করা হলে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেও এর উদ্দেশ্য সফল হবে না। এটি দূরদর্শিতার অভাব। উপজেলা সদর কাঠুর এলাকায় অনেক খাস জমি আছে, সেখানে কলেজটি হলে সবাই উপকৃত হবে।

উপজেলা সদরের বাসিন্দা মোনায়েম হোসেন মিম বলেন, ‘টেকনিক্যাল শিক্ষা দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্য। হাতে-কলমে দক্ষতা অর্জনই এর মূল লক্ষ্য। কিন্তু যদি শিক্ষার্থীরাই কলেজে পৌঁছাতে না পারে, তাহলে প্রকল্পের সাফল্য নিয়েই প্রশ্ন উঠবে।

গাইবান্ধা জেলা জজ আদালতের অ্যাডভোকেট আশিকুর রহমান মুন বলেন, ‘উপজেলার মূল সড়কের পাশে কলেজটি হলে ভবিষ্যতে এর সম্প্রসারণ করা যাবে। সরকারি হোস্টেল মেস গড়ে তোলা সহজ হবে এবং চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীরাও উপকৃত হবে। কালিরবাজার বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের আশপাশের খোলা জায়গায় এটি করা যেতে পারে।তিনি আরও বলেন, ‘সেখানে করা হলে এক কিলোমিটারের মধ্যে উপজেলা পরিষদ, হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিস, থানা দুটি বাজার থাকবে, যা নিরাপত্তা প্রশাসনিক সুবিধা নিশ্চিত করবে। ধরনের প্রতিষ্ঠান উপজেলা সদরের কাছাকাছি হলে ভবিষ্যতে ফুলছড়ি পৌরসভা গঠনেও সহায়ক হবে।

বিশ্বাস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শিক্ষানুরাগী ওয়াহেদুজ্জামান বিশ্বাস তোহা বলেন, ‘টেকনিক্যাল শিক্ষা মূলত দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্য। তাই কলেজ এমন জায়গায় স্থাপন করা জরুরি, যেখানে সর্বাধিক শিক্ষার্থী উপকৃত হবে।

বিষয়ে ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জগৎবন্ধু মন্ডল বলেন, "কলেজটি কাতলামারী এলাকায় স্থাপনের জন্য কয়েক দফা সমীক্ষা চালানো হয়েছে এবং এখন এটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এই মুহূর্তে নতুন করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে কলেজ স্থাপন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হবে।

এদিকে প্রস্তাবিত সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল কলেজ নিয়ে ফুলছড়িবাসীর মধ্যে এখন প্রত্যাশা শঙ্কা দুটোই কাজ করছে। তাদের দাবি কলেজটি যেন উপজেলা সদর বা যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়- এমন কোন জনবহুল এলাকায় স্থাপন করা হয়। তারা আশা করেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।