ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার

ভ্রমণ

ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার
ছবি- সংগৃহীত।

আপনি এমন একটি জায়গায় আছেন। জায়গাটি মাটির নীচে। ভূমি সমতলে ভবনের ছাদের অবস্থান, আর ছাদের উপর শোভাবর্ধন করে আছে চোখ জুড়ানো সবুজ ঘাস। যখন বেরিয়ে আসছেন, উঁকি দিয়েই চারিদিকে দেখতে পারছেন সবুজ প্রকৃতি। ধানক্ষেত। একবার চোখ বন্ধ করে কল্পনা করলে নিশ্চয়ই অনুভূতিটা অন্যরকম। তাই না। এমনই একটি স্থাপনা আছে উত্তরের জনপদ গাইবান্ধায়। যে স্থাপনাটি সম্পুর্ন মাটির নীচে। সেখানে চাইলে রাত্রী যাপন করতে পারেন আপনি। একা নয়, চাইলে পরিবার-পরিজন বন্ধু-বান্ধব সবাইকে নিয়ে যেতে পারেন। যেখানে আছে আনন্দ-বিনোদন, খেলাধুলাসহ যাবতীয় আয়োজন। 

গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে বালাসীঘাট সড়ক ধরে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই স্থাপনাটি ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার নামে পরিচিত। এটি ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের মদনেরপাড়া গ্রামে অবস্থিত।  ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছে ফ্রেন্ডশিপ নামক একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা। ২০০২ সালে প্রান্তিক ও সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জীবন-মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ফ্রেন্ডশিপ নামের এই সংস্থাটি যাত্রা শুরু করে। তাদের নির্মিত ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারে সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। 

সম্পূর্ণ মাটির নিচে অবস্থিত এই ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার নান্দনিক নির্মাণশৈলীর জন্য দেশ-বিদেশে বেশ সুনাম অর্জন করেছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছে। যার মধ্যে আগা খাঁ অ্যাওয়ার্ড অন্যতম।  মহাস্থানগড় বৌদ্ধ বিহারের আদলে নির্মিত ভবনটির স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী। 

২০১২ সালের ১৮ নভেম্বর গাইবান্ধা-বালাসী সড়ক ঘেঁষে নির্মিত ব্যতিক্রমী এই স্থপনাটিতে বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজ সম্পন্ন করার ব্যবস্থা ছাড়াও রয়েছে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, খেলাধুলা, লাইব্রেরি এবং থাকা-খাওয়ার আয়োজন। প্রায় ৮ বিঘা জায়গা জুড়ে গড়ে তোলা এই ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারটিতে আরও আছে ইন্টারনেট সুবিধা, নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, বিষমুক্ত সবজি চাষের জমি এবং ঔষধি গাছের বাগান।

ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত নয়। তবে আগে থেকে অনুমতি নিলে ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারের ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন।

সবুজ ঘাসে ঢাকা ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারের কক্ষগুলো প্রাকৃতিকভাবে বেশ ঠাণ্ডা থাকে। আর কক্ষগুলোতে সঠিকভাবে প্রাকৃতিক আলোর প্রবেশের জন্য রয়েছে অত্যাধুনিক ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা। বিভিন্ন সভা-সমাবেশ আয়োজনের জন্য অপূর্ব এই স্থাপনাটি ভাড়া দেয়া হয়।

যেভাবে যাবেন:

রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থান হতে এসি/নন-এসি বেশকিছু বাস ঢাকা-গাইবান্ধা রুটে চলাচল করে। যারমধ্যে অরিন ট্রাভেলস্, এস আর ট্রাভেলস, আল-হামরা পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন উল্লেখযোগ্য। বাসের ধরণ অনুযায়ী জনপ্রতি বাস ভাড়া ৬৫০ থেকে ১১০০ টাকা। এছাড়া ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে রংপুর এক্সপ্রেস, বুড়িমারী এক্সপ্রেস এবং লালমনিরহাট এক্সপ্রেস ট্রেনে করে গাইবান্ধা আসতে পারবেন। গাইবান্ধা শহর থেকে সিএনজি বা ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ভাড়া নিয়ে সরাসরি ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারের পৌঁছাতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন: 

গাইবান্ধায় রাত যাপনের জন্যে আছে গাইবান্ধা সার্কিট হাউজ, এসকেএস ইন হোটেল ও গণ উন্নয়ন কেন্দ্র রেস্ট হাউজ, হোটেল অভি, মন্ডল আবাসিক। এরমধ্যে কলেজ রোডে অবস্থিত এসকেএস ইন হোটেলের মান সবচেয়ে ভাল। রুমের সুযোগ সুবিধা অনুযায়ী ভাড়া ৩৫০০ থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত।